কেমন আছো, আসা করি ভালো আছো। আমি কে? পুরোটা পড়ার পর জানতে পারবে। আমি যদি ভুল না বলি তাহলে এই ঠান্ডা রাতে মাঝে মধ্যে জানালা খুলে একা কারো অপেক্ষা করা, কাউকে কৌতহল নজরে তাকানো এগুলো ইঙ্গিত করে যে তুমি কিছু জানতে চাইছো বা বলতে চাইছো কিন্তু বলতে পারছো না। এইভাবে চললে তো শরীর খারাপ হবে, মন খারাপ হবে, কোনো কিছু লাগবেনা, যখন কষ্ট হবে কে নিবে সেই কষ্ট শুনি। এই কষ্ট যদি আমার জন্য পাও তাহলে আমি নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবোনা। পৃথিবীর সমস্ত মেয়ে আমার কাছে সম্মানিত।
তুমি মনে করো মাঝে মধ্যে (তাকালে, কিছু ভাবনা প্রকাশ) এইরকম করলে তোমার মনের কথা কেউ বুঝতে পারবে, তাহলে তুমি ভুল ভাবছো, কারণ কোনো কাজ প্রত্যেক দিন একটু একটু করলে যেমন এক দিন ঠিক সম্পূর্ণ হয়, তেমনি কাউকে কিছু জানতে বা বলতে চাইলে প্রত্যেক দিন একটু একটু করে তাকে টাইম দিতে হয়। তোমার ইঙ্গিত ভালো কিন্তু একটুতেই হাল ছেড়ে দাও। তুমি মনে করো যখন যেটা ভাববে তখন সেটা যেন হয়ে যায়। এটা কিভাবে সম্ভব তুমি মনে করো ১ বছরের পড়া ১ দিনে পড়ে তুমি পাস করতে পারবে, পারবে না। তেমনি সম্পর্ক তৈরি করতে হলে তাকে টাইম দিতে হয়। তুমি কি দিয়েছো?.
আমি তোমাকে জানার বা জানবার জন্যে কেমন টাইম দিয়েছি তুমি জানো, জানো না। দীর্ঘ ১০ বছর, ভাবতে পারো, পারবে কি ভাবে কোনোদিন বোঝার চেষ্টা করেছো?. একথা আমি তোমাকে কোনো দিন জানতেও দিতাম না, আজ বলছি কারণ আমি আর যেমন নিতে পারছিনা, তেমনি তোমার কষ্ট দেখতেও পারছিনা। তাহলে বলছি শুনো:-
২০১৫ সালে সন্ধের সময় আমি তোমাদের বাড়ি প্রথম গিয়ে ছিলাম তখন তুমি ডিপ হলুদ রং-এর একটা ছাপা জামা পরে টিউশুনি যাবে বলে বেরিয়ে ছিলে, তোমার মাথার চুলটা ছিল কোমর পর্যন্ত যেটা দেখে আমার খুব পছন্দ হয়। প্রথম দেখে ভালো লেগেছিলো জানতাম না যে এই ভালো লাগা একদিন আমার কাল হয়ে দাঁড়াবে।
তুমি তোমার মাসির বাড়ি থেকে যখন আসতে তখন লুকিয়ে দেখতাম। তুমি যাবেনা বলে কান্না করতে, ঠিক একটা ছোট বাচ্চার মতন।
তারপর এখানে যখন এলে বাড়ি থেকে বেরোতেনা শুধু কলেজ যাওয়ার সময় যা দেখতে পেতাম। আমি রাস্তায় গেলে তুমি একটু তাকাতেও না আমার দিকে। বিশ্বাস করো তাও আমি মনে কিছু ভাবিনি।
প্রত্যেক দিন সন্ধে ৭টা , ৮টা , ৯টা , ১০টা, সময় তোমার জানালাকে তাকাতাম ৭ টার সময় লাইট না জ্বললে মনে করতাম কলেজ থেকে এখনো হয়তো আসোনি, ৮ টার সময় না জ্বললে ভাবতাম কলেজ থেকে দেরিকরে এসোছো তাই রেস্ট নিচ্ছ, রাত ১০ টা বা ১০.১৫ দিকে তুমি খেতে যাও। রাত ১২ টা ১২.৩০ টার সময় ঘুমাতে যাও।
পাঁশকুড়া বন্যার সময় তুমি যখন কলেজে যেতে তখন খুব রাগ হতো আবার চিন্তাও হতো। কাউকে খুশি করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলেজে যাওয়ার কি দরকার আছে?। আমার মা বলতো দেখ কেমন এরা, তুমি আসার সময় একা কিভাবে আসবে।
মাঝখানে টর্চ লাইট দিয়ে ছিলাম তোমার জানালায় কিন্তু ফল কিছু হয়নি উল্টে তোমার মনের কথা জানতে পারলাম। তোমার বাড়িতে কেউ আসলে তখন তুমি জানালায় পর্দা দিয়ে দিতে। ভাবতাম আমি হয়তো তোমাকে ডিস্টার্ব করছি বা তোমার প্রাইভেসি নষ্ট করছি। তাই আর ডিসটার্ব করিনি।
(তোমাদের বাড়িতে একটা ছেলে ছিল খড়্গপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো)
মনে আছে একদিন তোমার দাদু বিকেলে পিড়াকাটা থেকে আসছিলো আর ওই ছেলেটা ও একসঙ্গে আসছিলো, তোমার মা বলাতে তুমি দাদুর বেগ ধরতে গিয়েছিলে, বেগ সেই ছেলেটা ধরে ছিল তাই খালি যাবার সময় তুমি তার কাঁধ ধরে লাফিয়ে ছিলে, তার মাথার চুল থেকে কিছু একটা ফেলে দিয়েছিলে। আমাকে কেমন লাগবে? (উদাহরণ স্বরূপ ধরো তুমি তোমার প্রিয় মানুষের সঙ্গে একটা জায়গা গেছো সেখানে একটা মেয়ে তোমার প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে ধরে তাকে একটা কিস করলো, তুমি বোলো তোমাকে কেমন লাগবে) আমারও ঠিক সেই রকম লেগে ছিল।
এই কিছুদিন আগে মনে হয় তোমার কলেজের প্রজেক্ট করার জন্য ৩টা ছেলে এসেছিলো তাদের মধ্যে একজনের সাথে তুমি তোমাদের ছাদের উপরে, সে তোমাকে ধরার চেষ্টা করছিলো। তুমি ছুটে পালাচ্ছিলে।
কি বলবো কি বলবো না সেটা ঠিক করতে পারছিনা। এতো কথা আছে যেটা লিখতে বসলে হয়তো লেখা শেষ করার আগে জীবনই শেষ হয়ে যাবে।
**পরে বুঝতে পারলাম আমার ভুল কোথায় হচ্ছে, বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে গেছি। চাঁদ দূর থেকে যত সুন্দর লাগলেও যেমন হাতে ধরা যায়না, তেমনি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা সেটা কল্পনাতে সুন্দর লাগেও, বাস্তবে তা কখনো সম্ভব নয়। তোমার ২তোলা বড় বাড়ি, আমার ১তোলা ছোট বাড়ি, বয়স, তোমাদের স্টেটাস, ক্লাস, আদব কায়দা সবেতেই আকাশ পাতাল পার্থক্য। তোমার বা তোমার বাবা মায়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ছেলে পছন্দ, একটা বেকার, চুপচাপ থাকা ছেলেকে পছন্দ কেন করবে। যার জীবনের কোনো লক্ষ নেই, না আছে কোনো সমাজে প্রতিষ্ঠা না আছে কোনো সম্মান। আমি এতো লিখছি যাতে তুমি আমার ভাবনা টা বুঝতে পারো। তুমি যেটা শুনতে চাও সেটা আমি কোনো দিন বলতে পারবোনা। কারণ আমি নিরুপায়। SORRY..............................
আমি থাকি বা না থাকি কিছু কথা সবসময় মনে রাখবে :
মা বাবা ভাই বোন ইত্যাদি কেউ নিজের নয়। পৃথিবীতে আসার সময় কেউ যেমন নিজের মতন করে বাবা মা বেছে নিতে পারেনি, তেমনি তাঁরাও কোনো সন্তানকে বেছেনিতে পারে না। একটা কথা সত্য যে একা এসেছি একা যেতে হবে। কেউ চাইলে একে অস্বীকার করতে পারেনা। কাউকে খুশি করতে গিয়ে নিজের জীবনের আনন্দ কে নষ্ট করোনা। তোমাকে যেটা ভালো লাগে সেটা করো কিন্তু একটা সীমানার মধ্যে থেকে।
জীবনের আসল শিক্ষা বইয়ের ভিতরে পাওয়া যায় না, প্রকৃতি এবং সমাজ আমাদের যে শিক্ষা দেয় সেটাই আসল শিক্ষা। যেটা আমাদের জীবনে কাজে আসে। আজ সবার কাজের উপযোগী বলে সবাই তোমাকে আদর করবে, মানবে তুমি যেটা বলবে সেটা তারা শুনবে, যেদিন তুমি তাদের কথা শোনা বন্ধ করে দিবে সেদিন তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করতে আসবে না।*****
(কথাটা কতটা সত্যি? তার একটা এক্সপেরিমেন্ট করবে। ধরো তোমার মায়ের কোন একটা কথা যেটা তুমি সব দিন শুনে আসছো, সেটা শুনা বন্ধ করে দাও। তার পছন্দের অনুকূল আচরণ গুলো প্রতিকূল আচরণে পরিণত করে দাও দেখবে কিছুদিন পর এর ফল তুমি বুঝতে পারবে, এটা শুধু মায়ের সঙ্গে করতে হবে তা নয়, যে কারোর সাথে করে দেখতে পারো বন্ধু, বান্ধব, আত্বিয়, স্বজন, ভাই, বোন। ).
আজ হয়তো তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার খুব ভালো সম্পর্ক আছে, কিন্তু সেটা যে কাল চেঞ্জ হবেনা তার গেরেন্টি দিতে পারবে। তোমার দাদুর সঙ্গে পাশের বাড়ির ভাইয়ের সম্পর্কটা একবার দেখে নাও তাহলে বুঝতে পারবে। এক্সট্রা ২ ডিসমিল জায়গা দেয়ার সত্ত্বেও আজ এই অবস্থা। এটা ছাড়ো তোমার দাদুর সঙ্গে তার ৩ বোনের সম্পর্কটা একবার দেখেনাও রাখি বন্ধনে আসে না ভাই ফোটা তে আসে। এই সংসার বড়ো বিচিত্র যাকে নিজের ভাববে সেই একদিন তোমার ছুরি মারবে।
কোনোদিন নিজেকে প্রশ্ন করেছো তুমি কে? যেদিন তুমি নিজেকে জেনে যাবে সেদিন জীবনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবেনা। এই রকম আরও অনেক প্রশ্ন আছে যেমন : (মানুষ বিয়ে কেন করে? সন্তান কেন নেয়? আমি কথা থেকে এসেছি? কোথায় যাবো? আমার আসল কাজ কি?)ইত্যাদি।
এই সব শুনে তোমার হয়তো মনে হতে পারে জীবন টা খুব কঠিন, যদি ভেবে থাকো তাহলে বলবো ভুল ভাবছো। কারণ জীবন সরল সমাজ টি কঠিন। (একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝো, ধরো আমাদের মন হচ্ছে জল আর সমাজ হচ্ছে বিভিন্ন আকারের গ্লাস, এখন তুমি যেই গ্লাসে জল রাখোনা কেন জল কিন্তু সেই আকার ধারণ করে নিবে। মন আমাদের পরিবর্তন শীল কিন্তু সমাজ পরিবর্তন সিল নয়। জীবনে সুখ এলে যেমন আনন্দ হয় তেমনি দুঃখ এলে কষ্ট হয়, এর কারণ হলো আমরা মন কে সেই সময় কে মেনেনিতে বলি। সমাজে যারা আমাদের কিছু উপদেশ দেয় বা কিছু কথা বলে তখন সেটা পুরোপুরি তার কন্ট্রোল করার কথা থাকে, আমরা সেটা বিচার না করে সেই কথার অনুকূল কাজ করি। যদি তুমি মানো তাহলে ভালো নাহলে সবথেকে খারাপ মানুষ তুমি।)
আমি যতটা তোমাকে বুঝেছি তুমি বাইরে শক্ত হওয়ার নাটক করো কিন্তু ভিতরটা খুব খুব নরম, ঘুরতে পছন্দ করো, কথা বলতে পছন্দ করো। মনের ভিতরে অনেক কষ্ট। মনেরভিতরে অনেক কথা আছে যেটা কাউকে বলতে পারো না। যেকোনো কাজ চটজলদি করতে চাও ইত্যাদি।
অনেক অনেক কথা আছে যেটা লেখা সম্ভব নয়, শুধু একটা কথা সব সময় মনে রাখবে : মুখ দেখে নয় ব্যবহার দেখে মানুষ চেনার চেষ্টা করো, কারণ চিনি আর নুন দেখতে এক হলেও স্বাদ কিন্তু আলাদা।
এই জন্য আমার কোনো বন্ধু বান্ধব নেই।
আমি কারোর সেকেন্ড অপসেশন হতে চাইনা। আমি কোনো টেম্পোরারি রিলেশনে যায়নি কারণ আমি চাই পার্মানেন্ট রিলেশন, যে আমার সাইলেন্ট কে আমার থেকেও আরো ভালো জানতে ও বুঝবে পারবে।
আমার কাছে তুমি সবসময় স্পেশাল। বাদ দাও অনেক বকবকের সঙ্গে জ্ঞান দিয়ে ফেলাম। এইটুকু পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। যদি তোমার মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে সরি।
আজ দীর্ঘ ১০ বছর তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে, মনে যে একগুচ্ছ আশা ছিলো তা একটু একটু করে ভেঙে গেছে। একদিন মনকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম কিরে আর কাউকে ভালো লাগবে। উত্তর দেওয়ার আগে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। কি হবে এই বেকার ছেলের হাত ধরে। তোমাকে না ভালো রাখতে পারবো, না ভালো খাওয়াতে পারবো, না কোনো সুখ দিতে পারবো। আমি সাধ মাঠা জীবন পছন্দ করি মির্তুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত দুবেলা যেন খেতে পাই সেইটা আমার সব থেকে বড়ো চাওয়া। ভালো থেকো, ভগবানের আশীর্বাদ তোমার মুখের হাসি যেন এইরকম বজায় থাকে। ইতি 💔